হোস্টেল পরিদর্শনের নামে অনুমতি ছাড়াই আকস্মিকভাবে ছাত্রীদের কক্ষে প্রবেশসহ বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী নার্সিং কলেজের (আরএনসি) অধ্যক্ষ ফয়েজুর রহমানের বিরুদ্ধে। সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় কলেজটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব অভিযোগে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন।
এর আগে রোববার (১৯ জানুয়ারি) সকালে তার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে কলেজ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। 'ফয়েজুর হটাও, রানাক বাঁচাও'- স্লোগান দিতে থাকেন তারা। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ সেখানে ছুটে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন।শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তুলে বলছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত, স্বৈরাচারী ও আওয়ামী লীগের দোসর অধ্যক্ষ ফয়েজুর রহমানের অনৈতিক ও দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপের জন্য কলেজের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। তার দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও শিক্ষার্থীদের প্রতি বিরূপ আচরণ প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামগত উন্নয়নকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যার ফলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম এবং ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। অধ্যক্ষের অপশাসনের ফলে শিক্ষার্থীরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে চরম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এদিন তালিকা করে ১২টি অভিযোগ পড়ে শোনান তারা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগসমূহ হলো-
১. গত বছরের ১৭ জুলাই থেকেই আওয়ামী লীগের দোসর অধ্যক্ষ ফয়েজুর রহমান রাজশাহী নার্সিং কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেছেন। গত ৫ আগস্টের পরও তিনি আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে আসছেন।
২. হোস্টেল পরিদর্শনের নামে বিনা অনুমতিতে মেয়েদের কক্ষে প্রবেশ করেন অধ্যক্ষ। এতে মেয়েদের গোপনীয়তা বিনষ্ট হয় এবং মেয়েরা বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।
৩. আর্থিক দুর্নীতি: কলেজের আর্থিক তহবিলের অপব্যবহার, অনৈতিকভাবে টাকা গ্রহণ এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ।৪. পদক্ষেপে স্বেচ্ছাচারিতা: কলেজের নীতিমালা ও নিয়মাবলি উপেক্ষা করে, ইচ্ছামতো সিদ্ধান্তগ্রহণ করা, যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়।
৫. তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম বিদ্বেষমূলক আচরণ করে থাকেন।
৬. অপরিকল্পিত এবং পাঠদানের প্রতি অবহেলার কারণে তার বিষয়ে (সাবজেক্ট) প্রতিবছর সর্বোচ্চ সংখ্যক অকৃতকার্যের হার।
৭. সর্বদা শিক্ষার্থীদের প্রতি অসহযোগীতামূলক আচরণ।
৮. কলেজ এবং শিক্ষার্থীদের কোনো অনুষ্ঠান এবং অন্য কোনো কর্মসূচিতে সরকারি তহবিল থেকে কোনোরকম অর্থ সহযোগিতা করেন না এবং সেসব বিষয়ে সরকারি তহবিল থেকে কোনোরকম অর্থ বরাদ্দ হয়না বলে শিক্ষার্থীদের সাথে মিথ্যাচার করেন।
৯. অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন রকম হুমকি দিয়ে থাকেন।
১০. ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ১২ দফা দাবিতে স্বাক্ষর করলেও তা বাস্তবায়নে কোনোপ্রকার উদ্যোগ গ্রহণ করেননি এবং প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম মিথ্যাচার ও তালবাহানার আশ্রয় নিয়ে বিষয়টিকে ধামাচাপা
দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
১১. অধ্যক্ষের হাতে রাজশাহী নার্সিং কলেজের সকল শিক্ষার্থীরা অনিরাপদ।
১২. শিক্ষার্থীরা কলেজ এবং হোস্টেল কেন্দ্রিক কোনো সমস্যায় পড়লে অধ্যক্ষ বরাবর বারবার দরখাস্ত লিখলেও কোনো সমস্যার সমাধানে আশানুরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না, বরং হেয় প্রতিপন্ন করেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের আন্দোলন ১৭ জুলাই থেকেই শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আওয়ামী দোসরের পদত্যাগ দাবিতে আমাদের এই আন্দোলনকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করার জন্য নিছক একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আপনারা কোনো প্রকার গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাজশাহী নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ ফয়েজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছে। আমার সব কাজের স্বচ্ছতা রয়েছে।
পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সরকারের দাস। গভর্নমেন্ট আমাকে যখন যেখানে দেবে, আমি তখন সেখানে থাকব।